আমিও ছিলাম
✑ শায়েখ ইকবাল

হয়তো তুমি দেখেছো,
নীল আকাশে
ধূসর পায়রার দল উড়ে যেতে।
ওখানে আমিও ছিলাম,
আমিও ছিলাম
রোদ লেগে থাকা পালকের ঝাপটানো ডানায়,
ছিলাম তোমার প্রমিকের বেশে।

হয়তো তুমি দেখেছো
ঘোলাটে আকাশে
এলোমেলো মেঘেদের উড়ে যেতে,
ওখানে আমিও ছিলাম,
আমিও ছিলাম
টুপটাপ ঝরে পড়া একেকটা বৃষ্টির ফোটায়,
ছিলাম তোমার প্রেমিকের বেশে।

-

আমারও একটা বসন্ত আছে
✑ শায়েখ ইকবাল

বসন্ত ফুরালো বলে দুঃখ নেই,
মলিন দুপুরের শান্ত রোদ দিন দিন
তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
হারিয়ে গেছে কম বয়সী সবুজ
পাতার আশেপাশে সজনে ফুলের অকুন্ঠ সাদা হাসি,
অথবা থেমে যাবে কিংশুক অরন্যে ছড়িয়ে পড়া
চোখ জুড়ানো আগুন।
এরপর কোকিলের কুহু ডাকও একদিন মিলিয়ে যাবে
গ্রীষ্মের সাদা রোদে,
এক মধ্য দুপুরে হয়তো দাঁড়-কাকের বাসা থেকে
খসে পড়বে একটা ডিম।
তবুও বসন্ত ফুরালো বলে দুঃখ নেই,
সবারই নিজস্ব একটা বসন্ত থাকে,
আমারও একটা বসন্ত আছে।

-

দূর থেকে কাছে
✑ শায়েখ ইকবাল

তুমি দূরে থাকলে
সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যেগুলো সব মিলিয়ে যায়,
একই রকম লাগে সব।
আলাদা কোন পার্থক্যের রেখা টানতে পারিনা
আমি এদের মাঝে।

অথচ তুমি কাছে থাকলে
প্রতিটি স্নিগ্ধ ভোর সকাল থেকে আলাদা করতে পারি।
ফাগুনের দুপুরগুলোতে শুনতে পাই কোকিলের ডাক,
মৃদু হাওয়ায় আস্তে আস্তে উড়ে আসে একটা বিকেল,
বিকেলের ফুলে এসে বসে একটা বিরল কমন বার্ডউইং।
অতপর ঢলে পড়া বিকেল কানে নিঃশব্দে বলে যায় একটু পরেই সন্ধ্যে নামবে।

আর সন্ধ্যের ঠিক আগে তোমার বাদামী চোখে আমি খুঁজে নেই একটা বেগুনি গোধূলি।অথচ, তুমি দূরে থাকলে
সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যেগুলো সব মিলিয়ে যায়।

-

এবার শীতে
✑ শায়েখ ইকবাল

এবারের দ্রুত চলে যাওয়া শীতটা ছিল অন্য রকম।
এমন কখনো হয়নি, কখনোই হয়নি আগে এমন।

আমি দেখেছি দিগন্ত জোড়া সরষের মাঠ তোমার হলদেটে পোশাকে।
সবুজ ঘাসের উপর বসে থেকেছি দুজন,যখন নাম না জানা কয়েকটি ফুলের আশপাশে উড়ছিল একটা কমন ইভিনিং ব্রাউন।

তোমার কোলে মাথা রেখে,
দেখেছি ডিসেম্বরের রাতের আকাশে জ্বলজ্বল করতে থাকা নক্ষত্র,হয়তো তুমি লক্ষ করনি তোমার চোখে বিলীন হয়েছে
বহু আগের জমানো আমার সমস্ত বেদনা।
আমাদের হাতের উষ্ণতা হার মানিয়েছে পৌষের একটা গোটা সন্ধ্যেকে।

-

বসন্ত কখনো বলেনি,'বসন্ত এসেছে'
✑ শায়েখ ইকবাল
আজ বিকেলের কান্ত রোদে
রাস্তার ফুটপাত ধরে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম।
এই ছোট্ট শহরটা দেখলে এখন প্রায়শই 'অসমাপ্ত'
শব্দটা খুব বেশি মনে পড়ে।
যেখানে- সেখানে শুধুই অসমাপ্ত কনস্ট্রাকশনের
কাজ আর ধুলোবালি।
রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ি, আর ধুলোয় জমা ফুটপাত উপেক্ষা করে হঠাৎই চোখে পড়ে
একই সাথে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি গাছ।
যে গাছের পাতাগুলোর সবুজের দাপট অতি সহজেই ম্লান করতে পেরেছে অবাঞ্ছিত ধুলোবালি।
তবুও থেমে থাকেনি
কলমা লাল ফুলের ফুটে থাকা।
তবুও একটুও মলিন হয়নি অরণ্যের অগ্নিশিখা।

দূর থেকে দেখে মনেই হচ্ছিল,
আজ বনে বনে আগুন লেগেছে,
আজ বোধহয় এই গাছের প্রতিটি শাখায় আগুন ধরেছে।
আর এই আগুন আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়বে
শহরের অলিতে গলিতে।
মাঝে মধ্যেই সে আগুন টুপটাপ ঝরে পড়ছে
ধুলোমাখা পথে, কুড়িয়ে নিচ্ছে ছোট্ট শিশুরা।
প্রেয়সীর করবীও বাদ যায়নি এমন আগুনের ছোঁয়া হতে।
এরপর আর মনে করতে কষ্ট হয়নি এখন বসন্তের সময়, ফাগুনের আগুনঝরা বসন্ত।
হয়তো তাই, বসন্ত কখনো বলেনি,
'বসন্ত এসেছে"

-

ভালোবাসতে দিও
✑ শায়েখ ইকবাল

আমাকে তোমার প্রতিটা
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত
শীত আর বসন্তে রেখে দিও।

আমাকে তোমার মুখশ্রী প্রতিটা
ভোর, সকাল, দুপুর, বিকেল
সন্ধ্যা আর প্রতিটা রাতে
চোখে চোখ রেখে দেখতে দিও।

আমাকে সারাজীবন
তোমাকে ভালোবাসতে দিও।
আমাকে এভাবেই,
তোমাকে ভালোবাসতে দিও।

-

অক্ষরগুলো অন্য রকম
✑ শায়েখ ইকবাল
আমার মায়ের ভাষার
অক্ষরগুলো অন্য রকম।
এই অক্ষরে শহিদের রক্তের দাগ লেগে আছে,
ছেলে হারানো মায়ের কান্না লুকিয়ে আছে।
এই অক্ষরেই ভাইয়ের বুকে গুলিবিদ্ধ
হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া আছে।
আমার মায়ের ভাষার
অক্ষরগুলো অন্য রকম।
এই অক্ষরে এক রক্তাক্ত ফাগুন লেগে আছে,
প্রতিবাদের স্লোগান আছে,
এই অক্ষরেই আমার গর্ব লুকিয়ে আছে।
আমার মায়ের ভাষার
অক্ষরগুলো অন্য রকম।
এই অক্ষরে মায়ের কাছে লেখা,
সন্তানের রক্তে ভেজা শেষ চিঠি আছে।
এই অক্ষরেই
আমার ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে
অর্জিত একটা গৌরবের ইতিহাস আছে।
আমার মায়ের ভাষার
অক্ষরগুলো অন্য রকম।

-

একদিন তুষার নামুক
✑ শায়েখ ইকবাল

একদিন তুষার নামুক তোমার আমার কল্পনার শহরে,
ঢেকে যাক গোটা শহর তুষারের আস্তরণে।
দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পাইনের শাখায় গাঢ় সবুজ,
সাদা তুষারে লুকাবে।
শহরের ঝিলটাও হয়তো হারিয়ে যাবে,
হারিয়ে যাবে সব সাদার মাঝে।

আর ঠিক এমনি একটা তুষার শুভ্র সন্ধ্যায়
তোমার অপেক্ষায় আছি আমি। তখন সন্ধ্যে বেলায় কফিশপে জ্বলছে হলদে আলো।
কফিশপের কাচের দেয়াল ভেদ করে আমি স্পষ্টই দেখেতে পারছি তোমাকে।
তুমি হেঁটে আসছো সাদা শহরের ফুটপাত ধরে।
তোমার চারপাশে পড়ছে তখন গুঁড়ি গুঁড়ি সাদা তুলোর মতো তুষার। তুমি হাত বাড়িয়ে তুষার কণা ছুঁয়ে দেখছো আর আমি দেখছি তোমাকে।

তুমি আসার পরেই আমরা
ক্যাপেচিনো নিয়ে বসলাম সামনা সামনি।
জানি হয়তো অসম্ভব তবুও কল্পনাতে ধরে নিও এমনি একটা তুষার শুভ্র সন্ধ্যায় কফিশপে তখন শুধু তুমি আর আমি।
এরপর যখন দুজন দুজনার উষ্ণ হাত ছুঁয়ে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছি,
তখন বাহিরে একটা তুষারময় সন্ধ্যা,
যেনো অপেক্ষা করছে আমাদের দুজনের।— % &

-

আমার জন্য রেখে দিও
✑ শায়েখ ইকবাল

আমার জন্য রেখে দিও
এই চলে যাওয়া শীতের কিছু অংশ
সন্ধ্যে বেলার কুয়াশা,একটা হাড়কাঁপানো রাত,
মুক্তো দানার ন্যায় ভোরের শিশিরের ফোঁটা।

আমার জন্য রেখে দিও
সকালের পোড়া মাটির থালার মতো সূর্য, শীতের নরম রোদ,
রাতের হিমেল হাওয়া,আর রঙিন সব গন্ধলি।
আমার জন্য রেখে দিও
সকালের ভেজা সবুজ নরম ঘাস,
একফালি সরিষার হলদে ক্ষেত।
সদ্য নামিয়ে আনা খেজুরের রস,
রেখে দিও, তোমার হাতে তৈরি করা নাড়ু আর পিঠাপুলি।
আমার জন্য রেখে দিও,
পাতা ঝড়ার শুষ্ক মলিন বিকেল,
ঘাসের উপর পড়ে থাকা একটা হলদেটে পাতা।

আমার জন্য রেখে দিও ভালোবাসার স্নিগ্ধ ঋতু।
রেখে দিও, তোমার গায়ের জড়ানো ধূসর আলোয়ান,
তোমার কোমল হাতের উষ্ণ ছোঁয়া।
আর, আমার জন্য রেখে দিও এই তোমাকে।।— % &

-

বিপরীত
✑ -শায়েখ ইকবাল

ধরুন এমন একটা শীতের রাতে,
যখন বাহিরের তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রি ছুই ছুই আপনি একাকী একটা নীরব রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছেন।
কুয়াশার চাদরে তখন ঢেকে রয়েছে চারপাশ, কিছু কুকুরের দল রাস্তায় নিজের ক্ষমতার দাপট প্রচার করার জন্য ঘেউঘেউ করছে । আস্তে আস্তে কুকুরগুলোও কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো,মিশে গেলো কুয়াশার আড়ালে।

ল্যাম্পপোস্টগুলো একটু দূরে দূরে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে, কুয়াশা ভেদ করে যতটুকু দৃষ্টি যায় কিছুই চোখে পড়ছে না। কেউ নেই এই রাতের কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তায়, শুধু আপনিই একা।

(বাকিটা ক্যাপশনে) — % &

-